সোমবার, ২ মে, ২০২২

রমজানে মী-টাইম, উই-টাইম বের করা খুব টাফ ছিলো। রমজানের একটা ব্যস্ততা তো থাকেই তার সাথে সাথে সবার অফিসের কাজের চাপ। সবমিলিয়ে আমরা একসাথে থাকলেও ছিলাম না থাকার মতোই। রোজ দেখা হতো, ইফতারে টুকটাক আলাপ হতো কিন্তু জম্পেশ গল্প হতো না। যেটাকে সবাই খুব মিস করছিলাম। 

বাইশ রমজানে আমার স্কুল ছুটি হলো, ছোটোদের স্কুল-কলেজ সাথে ভাইয়াদের অফিসও। একটা ভ্যাকেশন আসলো। প্রতিটা মুহুর্ত কাটালাম একসাথে।  আমরা ছোটো থেকেই একজন আরেকজনের পছন্দকে প্রাধান্য দেই। সেই মোতাবেক একসাথে দল বেঁধে কেনাকাটা করেছি। ঘুরেছি। রাতের শহর দেখেছি। মানুষের আনন্দ দেখেছি। উদযাপনের প্রস্তুতি দেখেছি। একরাশ উৎসব যেন মৌ-মৌ করে ঘিরে ধরেছে আমাদের। আমরা সব ভাই-বোনরা যখন খুব আনন্দে থাকি, জড়াজড়ি করে থাকি বড়োআম্মুদের চোখেমুখে খুশির ফোয়ারা দেখতে পাই। আমাদের আনন্দই যেনো উনাদের তৃপ্তি।

আমরা গল্প করি রেনডমলি। টং এর দোকানে বসে চায়ের কাপে যেভাবে মুরব্বিয়ানরা ঝড় তুলে রাজনৈতিক আলাপ থেকে শুরু করে ক্রিকেট, ক্রিকেট থেকে শুরু করে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতি নিয়ে, আমাদের আড্ডাটাও খানিকটা তেমন। আমরা বলি, পৃথিবীর সব আড্ডাই যে শিক্ষণীয় হতে হবে তার কোনো মানে হয় না। আমরা খোশমেজাজে হেসেখেলে কথা বলি, কথা শুনি। আমরা একসাথে সময় কাটাচ্ছি, নিজেদের ভাগ করে নিচ্ছি আমাদের কাছে এটাই ইম্পরট্যান্ট। পয়েন্ট টু বি নোটেট আমরা একা না, আমরা একসাথে আছি। ইটস এ্যা আলটিমেট ম্যাজিক্যাল থিঙক আমাদের কাছে।  

তারাবির পর, গত পরশুরাতে সবাই একসাথে নুহাশ হুমায়ুনের 'পেট কাটা— ষ' সিরিজটা দেখলাম। কি দারুন কনসেপ্ট! কি দারুন এক্সিকিউশন! এটা দেখার বিশেষ কারন গল্পগুলো একেবারেই আমাদের। আমাদের চিরচেনা মিথের গল্প। আমাদের শৈশবের গল্প।আমাদের শেকড়ের গল্প। যে গল্পগুলোর সাথে মিশে আছে আমাদের মায়েরা, আমাদের দাদিরা। এমন একটা হরর সিরিজ সব ভাই-বোন একসাথে বসে দেখাটাই হ্যাপীনেস ছিলো আমাদের কাছে। 

আজ চাঁনরাত। এই রাতে বেসিক্যালি আমরা ঘুমাই না। কেউ ঘুণাক্ষরে ঘুমালেও নানা যন্ত্রনায় জোর করে তাকে জাগিয়ে রাখা হয়। এসব মিষ্টি অত্যাচার ভালোবাসার, মায়ার, একসাথে জেগে থাকার, স্মৃতিভান্ডার মজবুত করার। সারারাত একেক টপিকে খোশগল্পে মেতে থাকি। প্রতিটা রুমে মানুষে মানুষে গিজগিজ করে। সব আপনা মানুষ। সবাই সবার কথা ভাগাভাগি করে। টিভি দেখে। নিউজ দেখে। লো সাউন্ডে বাজতে থাকে আপামর বাঙালির মননে গেঁথে যাওয়া সেই গান— ও মন রমজানের ঐ রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ, তুই আপনাকে আজ বিলিয়ে দে, শোন আসমানী তাগিদ। চাঁনরাতে সবচে গুরুত্বপূর্ণ ডিপার্টমেন্ট রন্ধনশালা। এটা থাকে সবচে জমজমাট। সমানে মশলাপাতির প্রস্তুতি চলে, মায়েরা কালকের জন্য কি করবে না করবে তার জন্য ছোটো ছোটো সভারও আয়োজন করেন। রন্ধনশালার রাজত্ব একেবারেই উনাদের হাতে। পাঁচফোড়ন হয়ে আমাদের প্রবেশ করবার কোনো জো নেই। 

অন্যদিকে, আমরা এত্তোগুলা ভাই-বোন ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকি না। ছোটো থেকেই জড়াজড়ি করে থাকাটাই আমাদের অভ্যাস। এক বিছানায় শুয়ে বসে কাটিয়ে দেই। সত্যি বলতে এমন চাঁনরাত উদযাপনই— আমাদের ঈদ, আমাদের আনন্দ। আমরা এখনো বড়ো হইনি, বুড়ো হইনি। ঈদ আমাদের কাছে এখনো আনন্দের। আমাদের মধ্যে  ঈদের আনন্দ এখনো নিরানন্দ হয়ে আসে নি। সেই ছোটোবেলার মতো একই আগ্রহ কাজ করে। আমরা এখনো দুরন্ত। আমরা এখনো উল্লাসপ্রিয়। আমাদের শৈশব এখনো প্রাণবন্ত, জীবিত। মাঝেমধ্যে আমরা একজন আরেকজনের মুখের দিকে তাকিয়ে বলি— হাউ লাকি উই অ্যার! 

ঈদ মুবারক। 
দুই । পাঁচ । দুই হাজার বাইশ ।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

রমজানে মী-টাইম, উই-টাইম বের করা খুব টাফ ছিলো। রমজানের একটা ব্যস্ততা তো থাকেই তার সাথে সাথে সবার অফিসের কাজের চাপ। সবমিলিয়ে আমরা একসাথে থাকলে...