মঙ্গলবার, ১ মার্চ, ২০২২

শবে মে'রাজের রাত নিয়ে ইবাদত বন্দেগির পাশাপাশি কিছু কৃষ্টি কালচারও আমাদের পরিবারে প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেছে। আমাদের ছোটোবেলা থেকেই আমরা দেখে আসছি শবে মে'রাজ আসবে আসবে সময় থেকেই আমাদের পরিবারে একটা পবিত্রতার শীতল হাওয়া বইতে থাকে। ছোটো থেকে বড়ো সব সদস্যদের অন্তরালে শবে মে'রাজ উদ্‌যাপনের ব্যাপক তোড়জোড় চলতে দেখি। আমরা বছরে নির্দিষ্ট কয়েকটা দিন সর্বোচ্চ ভালো পোশাক পড়ার চেষ্টা করি, তারমধ্যে শবে মে'রাজের রাত একটি। সবচে ভালো জামাটা ধুয়ে আম্মা নতুনের মতো করে রাখতেন আর আমরা সেটি পড়ে নামাজ পড়তাম। 

শবে মে'রাজের দিন সকাল থেকেই বাসায় একটা সেলিব্রেশনের আমেজ ক্রিয়েট হয়। যে বছর যতটুকু সামর্থ্য হয় ঠিক ততটুকু দিয়েই ভালো-মন্দ খাবার দাবারের আয়োজন করা হয়। শবে মে'রাজ যে খুউব বিশেষ এটি আমরা ছোটো বয়স থেকেই পরিবারের উদ্‌যাপনের আমেজ দেখে বুঝতে পারতাম। 

সব শবে মে'রাজের রাতেই— এশারের পর নফল নামাজ আদায় শেষে, আমরা সবাই গোল করে বসি। বাড়ির বাচ্চারা একে একে নাতে মুস্তাফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পাঠ করে। চারিদিক থেকে মারহাবা মারহাবা বলে— আমরা তাদের উৎসাহ বাড়িয়ে দেই। তারপর পরিবারের সবচে বয়োজ্যেষ্ঠ কেউ— মে'রাজ গমনের বর্ণনা করে। প্রায় দেড়/দুই ঘন্টা ধরে চলে এই আলোচনা। প্রতিবছর একই ঘটনা, একই বর্ণনা কিন্তু ভিন্ন ভিন্ন ভোকালে আমরা আমাদের মতো করে নতুনভাবে এটার স্বাদ গ্রহণ করি। এখন অবশ্য মাঝেমধ্যে আমাকেও সুযোগ দেয় কিছু বলতে। যার জন্য আমি বিশেষ প্রস্তুতিও নিয়ে রাখি। আলোচনার ফাঁকফুকুরে শ্রোতাদের মুখের দিকে তাকাই, আর দেখি— আমি যতই মে'রাজ গমনের বর্ণানার দিকে আগাই তাদের চোখমুখ ততই রোমাঞ্চিত হয় ওঠে।  

স্বভাবত আমরা আমাদের বিশেষ দিনগুলা পরিবার নিয়ে আষ্ঠেপৃষ্টে জড়াজড়ি করে উদযাপন করি। মুরব্বী কিসিমের সদস্যরা তাদের শৈশবের মে'রাজ কেমন ছিলো, গ্রামকেন্দ্রিক মে'রাজ কিভাবে উদ্‌যাপন হয় এসব স্মৃতি অনর্গলভাবে আওরাতে থাকেন। সেহেরির কিছু আগে— পাড়ার মসজিদ থেকে ইমাম সাহেবের সুরেলা কন্ঠে ভেসে আসে, "আসমানোহি পর সব নবী রাহ গেয়ে, আরশ আযমপে পৌঁহছা হামারা নবী...........ছবছে আওলা ও আলা, হামারা নবী, ছবছে বালা ও আলা, হামারা নবী" আমরা সবে সুরে সুর মিলাই। গাইতে থাকি। 

এভাবেই আমরা হৈ-হৈ রৈ-রৈ করে মে'রাজ উদ্‌যাপন করি। সারারাত জেগে থাকি। আমার এতটুকু বয়সে আমি কোনোদিন একটা নিরানন্দ মে'রাজের রাত দেখিনি। ছোটোবেলা থেকে দেখে আসছি, আমাদের মে'রাজ রজনী খুব উৎসবমুখর। আলোকিত। জ্বলমলে। আজ-ও আমরা খুব দরদ নিয়ে এই দিনগুলা উদ্‌যাপন করি, আয়োজন করি। আমাদের এই দিনের, এই রাতের সেলিব্রেশন নিয়ে বিশেষ এক 'আল্লাদ' আছে। 

১ মার্চ, ২০২২ইং। 
শবে মে'রাজ রজনী।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

রমজানে মী-টাইম, উই-টাইম বের করা খুব টাফ ছিলো। রমজানের একটা ব্যস্ততা তো থাকেই তার সাথে সাথে সবার অফিসের কাজের চাপ। সবমিলিয়ে আমরা একসাথে থাকলে...