১|
বৃহস্পতিবার। ভোর ৪টা ৩০। নিয়মমাফিক মোবাইলের এলার্মেই ঘুম ভাঙলো। শহরে এখনো ঝাঁকিয়ে শীত না নামলেও হালকা শীতের আমেজ তো বইছেই। চারিদিকটা তাই হালকা কুয়াশায় আচ্ছন্ন। কুয়াশার বুক ভেদ করে যেন— ফুটে উঠছে আলোর রেখা। মক্তব থেকে কুয়াশায় ভেসে আসছিলো মুয়াজ্জিনের দরদিয়া কণ্ঠে—"আস-সলাতু খাইরুম মিনান নাউম/ আস-সলাতু খাইরুম মিনান নাউম"। সালাত শেষ করলাম। তারপর দ্বিতীয় দফায় আবার ঘুমের প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। ক্লাস- সকাল ৯টা ৪০-এ। ভার্সিটির গাড়ি- ৯টা ২০-এ। মোবাইলে এলার্ম সেট করলাম ৮টা ৫০-এ। সময়মত 'ক্রিং ক্রিং' টোনে এলার্ম বেজেই চলছিলো, কিন্তু ঘুম আর ভাঙতে চাচ্ছিলোই না। গড়িমসি করে উঠতে উঠতে ভার্সিটির গাড়ির আর নাগাল পেলাম না। ক্লাসটাও যেন মিস না হয় তাই তড়িঘড়ি করে, টাট্টুঘোড়ার মতো ছুটতে লাগলাম।
"Research Methodologies & Action Research" এবং "The Literature of Civil Rights" এর পরপর দুটো ক্লাস শেষ করে স্বস্তিতে গাড়িতে চাপলাম। মেইন সড়কে এসে আরেকটা গাড়ির জন্য দাঁড়িয়ে আছি। পিছন থেকে একটা ট্রাক খুব ফাস্ট ছুঁ মেরে আমাদের শরীর ছুঁয়ে গেল। একেবারে গা ঘেঁষে যাওয়া যাকে বলে। আমাদের পজিশন যদি একটু এদিক সেদিক হতো আজকেই আমাদের নামের আগে 'মৃত অমুক / মৃত তমুক' লাগতে পারতো। কিন্তু সবই তাঁর ইচ্ছে। আমরা এখনো নিঃশ্বাস নিচ্ছি। আমরা এখনো বেঁচে আছি।
কুরআনের বিভিন্ন স্থানে বলে দেয়া হয়েছে যে, মৃত্যুর জন্য সময় নির্ধারিত রয়েছে। সে সময় উপস্থিত হয়ে গেলে কেউ বাঁচতে পারবে না। আবার যদি সে সময় তখনো না আসে, তা হলে কেউ মরতেও পারবেনা।
এভাবেই নানা জায়গায় বলা হয়েছে, কোনো কষ্ট বা ক্ষতিসাধন করা না করা একান্তভাবেই আল্লাহর ইচ্ছা-অনিচ্ছার ওপর নির্ভরশীল। যতক্ষণ পর্যন্ত তাঁর ইচ্ছা ও হুকুম না হবে, ততক্ষণ পর্যন্ত কেউ আমাদেরকে কষ্ট দিতে ও ক্ষতি সাধন করতে পারবেনা। আর যখন তার পক্ষ থেকে হুকুম হবে, তখন কেউ আমাদেরকে কষ্ট ও ক্ষতি থেকে রক্ষাও করতে পারবেনা।
>>সূরা আল ইমরানে ইরশাদ হয়েছে, ‘আর কারো মৃত্যু আসতে পারে না আল্লাহর হুকুম ব্যতীত। (মৃত্যুর জন্য) নির্ধারিত সময় লেখা হয়ে গেছে।’ (সূরা আল ইমরান : আয়াত ১৪৫)।
>>অন্য আরেক জায়গায় বলা হয়েছে, ‘যখন তাদের মৃত্যুকাল উপস্থিত হয়ে যাবে, তখন না এক মুহূর্ত পেছনে থাকতে পারবে, না এগিয়ে যেতে পারবে (ঠিক নির্ধারিত সময়ে তুলে নেয়া হবে)। (সূরা ইউনুস : আয়াত ৪৯)।
২|
দুপুর ১:৪০। ওই যে ট্রাক এক্সিডেন্টের ঘটনাটি ঘটলো সেই সুবাধে সড়কপথে কিছুক্ষণ দাড়িয়ে আছি। সময় নিচ্ছিলাম, গাড়িতে চড়চ্ছিনা। ছোটো খালার বাসা থেকে পায়ে হেটে মাত্র ৬/৭ মিনিট পথের দূরত্বে অবস্থান করছিলাম। পেটে প্রচণ্ড খিদা। প্রয়োজনীয় কিছু কাজ আছে, বাসায় গিয়ে খাওয়ার সময়ও নাই। তাই ভাবলাম ডিম চপই হয়তো আজকের দুপুরের খাবার। কিন্তু মনে মনে ছোটো খালার বাসায় গিয়ে কিছুক্ষণ বিশ্রাম করার কথাও মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছিল। ভাবতে ভাবতেই আচমকা ফোনটা বেজে উঠলো। কাকতালীয়ভাবে ফোনের স্ক্রিনে দেখলাম 'ছোটো খালা'। কোনো কাজটাজ দিবে ভেবে কলটা ধরিনি। আবার কল। তারপর আবার কল। অবশেষে ধরলাম। ও-পাশ থেকে বেশ ধমকের সুরেই বলছেন—কিরে ফোন ধরিস না কেন? তুই আশেপাশে থাকলে বাসায় আয়। কাজ আছে। কাজের কথা শুনে মুখ আর মন দুটোই পানসে হয়ে গেল।
তারপর ভাবলাম, যেহেতু উনার বাসার আশ-পাশেই ঘুরঘুর করছি তারচে বরং চলেই যাই। গেলাম। প্রায় ২টা ৩০ ছুঁইছুঁই। উনার বাসায়, কবজি ডুবিয়ে হাঁসের মাংস আর পোলাও খেলাম। সাথে মাখানো সালাদ। আমার খুব প্রিয়। দুপুরে খাবারটা ডিম চপ থেকে হাঁসের মাংস। তারপর ৩০/৪০ মিনিটের একটা শান্তির বিশ্রাম শেষ করে, বের হয়ে পড়লাম নিজের কাজে।
দ্যাখেন, আমি আগামি দশ বছরে কত টাকা আয় করবো বা আগামি দশ বছরে কি কি খাবার কতটুকু খাবো— সব কিছুই এক আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত। সকলের রিযিকের মালিক তিনিই। কারো রিযিক কমানো-বাড়ানো বা জুতসই করা সবই তাঁর এখতিয়ার। সারা দুনিয়ার মানুষ মিলেও যদি আপনার বা আমার রিযিক বন্ধ করতে চায় কিন্তু আল্লাহ না চাইলে কেউ পারবে না আবার আল্লাহ রিযিক দিতে না চাইলে সারা দুনিয়ার মানুষ মিলেও আপনাকে বা আমাকে এক লোকমা খাবার খাওয়াতে পারবে না। তিনি আমাদের জন্য যতটুকু নির্ধারণ করে রেখেছেন, ঠিক ততটুকুই কেবল আমরা ভোগ করতে পারি বা পারব। খুব স্মুথলী।
কুরআনের অনেক সূরায় রিযিক সম্পর্কে বলা
হয়েছে—
>>আল্লাহ পাক উত্তম রিযিকদাতা। (সুরা জুমা : ১১)।
>>নিশ্চয় আল্লাহ পাকই রিযিকদাতা। (সুরা জারিয়াত : ৫৮)।
>>পৃথিবীতে বিচরণকারী প্রত্যেকটি প্রাণীর জীবিকার দায়িত্ব আল্লাহ পাক নিজেই গ্রহণ করেছেন। (সুরা হুদ : ৬)।
>>আল্লাহ পাকই তাঁর বান্দাদের মধ্যে যাকে ইচ্ছা রিযিক বাড়িয়ে দেন এবং যাকে ইচ্ছা তাঁর রিযিক সীমিত করেন। নিশ্চয় আল্লাহ পাক সব বিষয়ে সম্পূর্ণ অবগত। (সুরা আনকাবুত : ৬২)।
-------------------------------------------
আমাদের বিশ্বাস রাখতে হবে, আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলাই আমাদের হায়াত-মউতের মালিক। তিনিই আমাদের রিযিকদাতা। শুধু রিযিকদাতা নয়; উত্তম রিযিকদাতা। এবং তিনিই সর্বশ্রেষ্ঠ পরিকল্পনাকারি। জীবনের প্রতিটি পরতে পরতে তিনি আছেন, শুধু কি আছেন?—সবটুকু দিয়ে আছেন। এযাবৎ আমার সাথে যা যা ঘটেছে সবকিছুই ভালো ঘটেছে ; বরঞ্চ বলতে হয়—'সর্বোচ্চ ভালোটাই' ঘটেছে।
আলহামদুলিল্লাহ। মাআসসালাম।
আঠারো | এগারো |